শীতে শরীর গরম রাখার সহজ উপায়

 
শীতকাল আমাদের প্রকৃতিতে স্বস্তি নিয়ে এলেও অনেক সময় এটি শরীরের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ কম, সর্দি-কাশি বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে, ঠান্ডায় তাঁদের শারীরিক অস্বস্তি দ্রুত বেড়ে যায়।

এ সময় শরীর গরম রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে যায় এবং দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি তৈরি হয়। তাই কিছু সহজ, প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় মেনে চললে খুব সহজেই শীতের কষ্ট কমানো যায়।

পেজ সূচিপত্রঃ

শীতে উষ্ণ থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সঠিক পোশাক নির্বাচন করা। অনেক সময় মানুষ শুধু মোটা জামা পরে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে layers বা স্তর পদ্ধতিতে পোশাক পরলে শরীর অনেক বেশি গরম থাকে।

উপকারী স্তরগুলো হতে পারে।ইনার লেয়ার, থার্মাল বা সুতির টাইট পোশাক।মিড লেয়ার, সোয়েটার বা হুডি।আউটার লেয়ার, জ্যাকেট বা কোট।এছাড়া মাথা, হাত ও পা সবচেয়ে দ্রুত ঠান্ডা হয়। তাই টুপি, মাফলার, দস্তানা এবং মোজা পরা জরুরি।

গরম পানি ও হারবাল চা পান করা

শীতের দিনে গরম পানি শরীর দ্রুত উষ্ণ করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। শুধু পানি নয়, চাইলে নিচের হারবাল চাগুলো খেতে পারেন।
  1. আদা চা
  2. তুলসী চা
  3. দারুচিনি চা
  4. লেবু-মধু চা
  5. পুদিনা চা
এগুলো শরীর গরম রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

পুষ্টিকর ও উষ্ণ খাবার খাওয়া

শীতের সময় খাবারের তালিকায় কিছু উষ্ণ খাবার যোগ করলে শরীর স্বাভাবিকভাবে গরম থাকে। যেমনঃ
  • মুরগির স্যুপ
  • খিচুড়ি
  • পায়েস
  • ওটস
  • খেজুর
  • বাদাম
  • মধু
  • ডিম
  • মসলা জাতীয় খাবার আদা, রসুন, গোলমরিচ
এই খাবারগুলো শুধু শরীর গরমই রাখে না, শীতকালীন ক্লান্তি দূর করে এবং শক্তি জোগায়।

হালকা ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়

অনেকে মনে করেন শীতে ব্যায়াম করলে ঠান্ডা লাগতে পারে। আসলে তার বিপরীতটাই সত্য।
হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীর গরম রাখে। যেমনঃ
  • দ্রুত হাঁটা
  • স্ট্রেচিং
  • স্কোয়াট
  • জাম্পিং জ্যাক
  • হালকা ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম
যারা বাইরে যেতে চান না, তাঁরা ঘরেই ১০–১৫ মিনিট ওয়ার্কআউট করলেও হবে।

 সঠিক শরীরচর্চা ও শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন

  1. ইয়োগা বা প্রানায়াম শরীরে তাপ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে
  2. ব্রিদিং এক্সারসাইজ
  3. সুনামি ব্রিদিং
  4. সূর্য নমস্কার
  5. এগুলো শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণ করে রাখে।

মানসিক চাপ কমানো

  • স্ট্রেস বা উদ্বেগ শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
  • মেডিটেশন
  • হালকা মিউজিক
  • পর্যাপ্ত ঘুম
  • বই পড়া
  • এই কাজগুলো মানসিক চাপ কমিয়ে শরীর স্বাভাবিক রাখে।

গরম পানিতে গোসল অথবা পা ডুবিয়ে রাখা

  • গরম পানিতে গোসল করলে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তি দূর হয়।
  • যদি গোসল করতে না চান, তবে শুধু
  • পা গরম পানিতে ১০–১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।
  • এটি শরীরের স্নায়ু শিথিল করবে এবং শীত কম অনুভূত হবে।

ঘর উষ্ণ রাখার কিছু ঘরোয়া উপায়

শীতে ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়। বিশেষ করে টিনের ঘর, উত্তর দিকের ঘর বা সূর্যের আলো কম আসে এমন জায়গায় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়। সহজ উপায়ঃ
  • জানালা-দরজার ফাঁক বন্ধ করা
  • ঘরে কার্পেট বা ম্যাট বিছানো
  • পুরু পর্দা ব্যবহার
  • সন্ধ্যার পরে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা
  • হিটার বা ব্লোয়ার ব্যবহার (প্রয়োজন অনুযায়ী)
  • যাঁরা হিটার ব্যবহার করেন, তাঁদের ঘরে পানি বা ভেজা তোয়ালে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে ঘরের আর্দ্রতা বজায় থাকে।

হট ওয়াটার ব্যাগ বা হিট প্যাড ব্যবহার

যাদের জয়েন্টে ব্যথা বা পায়ে ঠান্ডা লাগে, তাঁরা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। 
  • পেশী শিথিল করে
  • ঠান্ডা কমায়
  • ঘুম ভালো এনে দেয়
  • তবে খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার না করাই ভালো।

সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ বসা

শীতের দিনে রোদ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রোদে ১৫–২০ মিনিট বসলে।
  1. শরীর গরম থাকে
  2. ভিটামিন–ডি পাওয়া যায়
  3. রক্ত সঞ্চালন বাড়ে
  4. মানসিক চাপ কমে
  5. এটি একেবারে প্রাকৃতিক ও বিনামূল্যের উষ্ণতার উৎস।

ত্বক ও শরীর ময়েশ্চারাইজ করা

শীতে শরীরে শুষ্কতা বাড়ে, যা ঠান্ডা আরও বেশি লাগাতে পারে। তাই গোসলের পর,
  • নারকেল তেল
  • অলিভ অয়েল
  • ময়েশ্চারাইজার
  • ব্যবহার করলে ত্বকে উষ্ণতা ধরে রাখা সহজ হয়।

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া

শীতে অনেকের ঘুম কমে যায় বা ঘুম এলেও শরীর ঠান্ডা লাগে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা সহজে লাগে। এজন্য:
  • মোটা কম্বল ব্যবহার
  • বিছানায় হট ওয়াটার ব্যাগ রাখা
  • ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করা
  • মোজা পরে ঘুমানো
  • এগুলো শরীর উষ্ণ রাখে এবং নিদ্রার মানও বাড়ায়।

 শরীর ভেজা রেখে না থাকা

  • অনেকেই ঠান্ডায় হাত-মুখ ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে কম মুছেন, ফলে শরীর ঠান্ডা ধরে।
  • কাপড় ভেজা থাকলে বদলে ফেলুন
  • পা বা মাথা ভিজলে দ্রুত শুকিয়ে নিন
  • ভেজা শরীর শীতকে দ্রুত আকর্ষণ করে।

উপসংহার

শীতে শরীর গরম রাখা খুব কঠিন নয় বরং কিছু সহজ জীবনধারা মেনে চললেই এটি সম্ভব। সঠিক খাবার, গরম পোশাক, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি ও ঘর উষ্ণ রাখার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপ আপনার শরীরকে ঠান্ডার কষ্ট থেকে রক্ষা করবে। 

শীতকাল উপভোগ করতে হলে শরীরের সুরক্ষাই প্রথম শর্ত। তাই উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে আপনি পুরো শীতজুড়ে থাকবেন সুস্থ, সতেজ ও উষ্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url